শিবির এখন আধুনিক নারীদের চোখে ‘হিরো’! বদলে যাচ্ছে জামায়াতকে দেখার পুরোনো ধারণা?

দীর্ঘদিন ধরে জামায়াত-শিবির সম্পর্কে সমাজে একটি নির্দিষ্ট নেতিবাচক ধারণা প্রচলিত ছিল। বিশেষ করে আওয়ামী লীগের টানা ১৬ বছরের শাসনামলে ‘রগ কাটা’ শিবিরের যে বর্ণনা তৈরি হয়েছিল, তা সাধারণ মানুষের মনে গভীর প্রভাব ফেলেছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক কিছু ঘটনা এবং অভিজ্ঞতা সেই প্রচলিত ধারণাকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে। বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আধুনিক, শহুরে নারীরা জামায়াত-শিবিরকে ভিন্ন চোখে দেখছেন।

মোনামি ও জিনা: আধুনিক নারীর চোখে শিবির

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর সেহরিন নামিন মোনামির অভিজ্ঞতা ছিল চোখে পড়ার মতো। ছাত্রদল তাকে ‘রাজাকার’ ও ‘শিবিরের দোসর’ বলে ট্যাগ দিলেও, তিনি শিবিরের প্রতি ছিলেন ইতিবাচক। কারণ তার এক মেধাবী ছাত্র, যিনি তার ডিপার্টমেন্টের ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট, তিনি শিবিরের রাজনীতির সাথে যুক্ত। এই ছাত্রের ভালো ব্যবহার, ভদ্রতা এবং মেধা মোনামিকে মুগ্ধ করে। তার মনে হয়েছে, এমন ভালো ছেলে যদি শিবির করে, তাহলে শিবির নিশ্চয়ই একটি ভালো সংগঠন।

একইভাবে, ডেইলি স্টারের সাংবাদিক জিনা তাসরিন, যিনি আধুনিক মননের অধিকারী, তিনিও জামায়াত-শিবিরের প্রতি আকর্ষণ অনুভব করেন। জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের সময় সাদিক কায়েমের সঙ্গে কাজ করার পর তিনি জানতে পারেন সাদিক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা শিবিরের সভাপতি। সাদিকের মেধা, সাহস এবং ভদ্রতা তাকে অবাক করে দেয় এবং জামায়াত-শিবির সম্পর্কে তার পূর্বের ধারণা পাল্টে যায়।

নারী সাংবাদিকের অভিজ্ঞতা ও জামায়াতের পরিবর্তিত কৌশল

বেসরকারি টেলিভিশনের সাংবাদিক ফেরদৌস ওসারের অভিজ্ঞতাও একই ধরনের। তিনি যখন ছাত্রশিবিরের সদস্য সম্মেলনে গিয়েছিলেন, তখন নারী হিসেবে তিনি সেখানে যথেষ্ট নিরাপত্তা ও সম্মান বোধ করেছেন। সম্মেলনটি ছিল অত্যন্ত সুশৃঙ্খল, যা দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সভা-সমাবেশে সচরাচর দেখা যায় না। এই ধরনের ঘটনাগুলোই প্রমাণ করে যে, জামায়াত-শিবির সম্পর্কে মানুষের ভুল ধারণা ধীরে ধীরে ভাঙছে।

বিশেষ করে, ৫ আগস্টের পর ছাত্রশিবির তাদের কৌশল পরিবর্তন করে। তারা উপলব্ধি করে যে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ক্ষমতায় আসতে হলে সমাজের সব স্তরের মানুষকে কাছে টানতে হবে। আর বাংলাদেশের মোট ভোটারের অর্ধেক নারী, যাদের অধিকাংশই নন-হিজাবী। তাই জামায়াত যদি জোর করে হিজাব চাপিয়ে দেওয়ার কথা বলে, তাহলে তাদের প্রায় ৩ কোটি ভোট হারানোর ঝুঁকি থাকে।

নিরাপদ বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতি ও ডাকসু মডেল

আওয়ামী লীগ ও বিএনপি এতদিন নারীদের ভয় দেখাতো যে জামায়াত ক্ষমতায় এলে তাদের ঘর থেকে বের হতে দেবে না, চাকরি-ব্যবসা করতে দেবে না। কিন্তু জামায়াত এখন এই ভয় দূর করতে চাইছে। তারা বলছে, তারা ক্ষমতায় এলে নারীদের জন্য একটি নিরাপদ বাংলাদেশ তৈরি করবে, যেখানে কর্মস্থল বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কেউ হয়রানি করতে পারবে না।

এর সবচেয়ে বড় প্রমাণ হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকসু নির্বাচন। সেখানে শিবির প্যানেল বিজয়ী হওয়ার পর ক্যাম্পাসে বোরকা বাধ্যতামূলক হয়নি, কিংবা সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ হয়ে যায়নি। বরং নারীর নিরাপত্তা বেড়েছে। এই ‘ডাকসু মডেল’ জামায়াতের নির্বাচনী প্রচারণার একটি বড় হাতিয়ার হয়ে উঠেছে। যদি তারা এই বার্তা তৃণমূল পর্যায়ে ছড়িয়ে দিতে পারে, তাহলে মোনামি ও জিনা তাসরিনের মতো আরও অনেক নন-হিজাবী নারী আগামী নির্বাচনে জামায়াতকে ভোট দিয়ে তাদের ক্ষমতায় আসার পথ প্রশস্ত করতে পারেন।

আপনার কি মনে হয়, এই পরিবর্তনগুলো বাংলাদেশের রাজনীতিতে কোনো নতুন মোড় আনবে? আপনার মতামত কমেন্টে জানান।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top