ঢাকা, ৩০ আগস্ট ২০২৫ – দেশের রাজনীতির ময়দানে আলোচিত নাম নুরুল হক নুর, যিনি ডাকসুর সাবেক ভিপি হিসেবে ছাত্র আন্দোলনের প্রতীক হয়ে উঠেছিলেন, তিনি আবারো এক নির্মম হামলার শিকার হলেন। শুক্রবার (৩০ আগস্ট) রাজধানীর কাকরাইলে গণঅধিকার পরিষদের একটি কর্মসূচি ঘিরে ভয়াবহ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে, যেখানে নুরসহ তাঁর অনেক সমর্থক আহত হন।
ঘটনাপ্রবাহ
সূত্রমতে, সেদিন সন্ধ্যায় গণঅধিকার পরিষদ একটি মশাল মিছিলের আয়োজন করেছিল। মিছিল চলাকালে জাতীয় পার্টির (জাপা) কর্মীদের সঙ্গে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। মুহূর্তেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। শুরু হয় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, ইট-পাটকেল নিক্ষেপ। এক পর্যায়ে নুরকে টার্গেট করে আক্রমণ চালানো হয়।
চোখের সাক্ষীরা জানিয়েছেন, নুরকে নির্মমভাবে লাঠি ও লোহার রড দিয়ে পেটানো হয়। মাথা, মুখ ও নাকে গুরুতর আঘাত লাগে। হামলার পর তাকে মুমূর্ষু অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
চিকিৎসকদের রিপোর্ট
ঢামেকের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, নুরের মাথায় গুরুতর আঘাত লেগেছে, নাকের হাড় ভেঙে গেছে এবং প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে। তাঁকে আইসিইউতে রাখা হয়েছে। চিকিৎসকরা বলছেন, নুর এখনো আশঙ্কামুক্ত নন এবং বিশেষ মেডিকেল বোর্ড তাঁর চিকিৎসা চালাচ্ছে।
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
হামলার পর রাজনৈতিক অঙ্গনে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। বিএনপি, ছাত্রদল, নাগরিক ঐক্যসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও ছাত্র সংগঠন হামলার নিন্দা জানিয়েছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এক বিবৃতিতে বলেন—”এটি কেবল নুরুল হকের ওপর আক্রমণ নয়, বরং গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে স্তব্ধ করার এক ষড়যন্ত্র।”
জাতীয় পার্টি ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলও হামলার তদন্ত দাবি করেছে। সরকারও জানিয়েছে, এ ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত হবে এবং দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ছাত্রসমাজের প্রতিক্রিয়া
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ইতোমধ্যেই বিক্ষোভ শুরু করেছে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মশাল মিছিল, প্রতিবাদ সমাবেশ এবং ক্লাস বর্জনের ডাক দেওয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেছেন—নুরকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করার উদ্দেশ্যেই এই হামলা চালানো হয়েছে।
সামাজিক প্রভাব
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নুরের প্রতি সহানুভূতি ও সমর্থনের ঢেউ বইছে। হাজারো মানুষ টুইটার, ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামে হামলার প্রতিবাদ জানিয়ে হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করছেন। অনেকে লিখছেন—“আজ নুর আহত, আগামীকাল হয়তো আমরাও টার্গেট হবো।”
বিশ্লেষণ
নুরুল হক নুরকে ঘিরে সহিংসতা নতুন কিছু নয়। এর আগে তিনি একাধিকবার রাজনৈতিক হামলার শিকার হয়েছেন। কিন্তু এবারের হামলার নির্মমতা রাজনৈতিক সংস্কৃতির ভয়ঙ্কর রূপ প্রকাশ করেছে। অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন—এটি কেবল ব্যক্তিগত আক্রোশ নয়, বরং বিরোধী কণ্ঠস্বরকে দমন করার একটি ‘সিগন্যাল’ বা হুঁশিয়ারি।
নুরকে এভাবে পিটিয়ে আহত করার ঘটনা কেবল একজন তরুণ নেতার উপর আক্রমণ নয়—এটি গণতন্ত্র, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও নাগরিক অধিকারের উপর সরাসরি আঘাত। বাংলাদেশ রাজনৈতিক সহিংসতার যে চক্রে আবদ্ধ, নুরের ওপর এই হামলা তা আবারও স্পষ্ট করে তুলেছে।
প্রশ্ন এখন একটাই দোষীদের শাস্তি কি সত্যিই হবে, নাকি আরও একটি ঘটনা হারিয়ে যাবে বিচারহীনতার অন্ধকারে?