ঢাকা, ২৬ আগস্ট ২০২৫ — বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানা এবং এনসিপি নেতা হাসনাত আবদুল্লাহর মধ্যে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব এবার ব্যক্তিগত আক্রমণের পর্যায়ে পৌঁছেছে। নির্বাচন কমিশনকেন্দ্রিক এক ঘটনার জের ধরে সামাজিক মাধ্যমে তুমুল আলোচনার জন্ম দিয়েছে রুমিন ফারহানার ‘ফকিন্নির বাচ্চা’ মন্তব্য।
কী ঘটেছিল নির্বাচন কমিশনে?
গত রোববার (২৪ আগস্ট) রাজধানীতে নির্বাচন কমিশনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে বিএনপি ও এনসিপির নেতাদের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি ও উত্তেজনা দেখা দেয়। এ সময় এনসিপির নেতা হাসনাত আবদুল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন,
“রুমিন ফারহানা বিএনপির ভেতরে আওয়ামী লীগ বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে কাজ করছেন।”
তিনি আরও অভিযোগ করেন, নির্বাচন কমিশন শিবিরকে অংশগ্রহণের সুযোগ দিয়ে পক্ষপাতমূলক আচরণ করছে।
রুমিন ফারহানার জবাব: ‘ফকিন্নির বাচ্চা’
পরের দিন (২৫ আগস্ট) রাত ৭টা ৪৭ মিনিটে নিজের ফেসবুক পেজে রুমিন ফারহানা লিখেন:
“এটা ঐ ফকিন্নির বাচ্চাটা না, যে আমাকে আওয়ামী লীগ বিষয়ক সম্পাদক বলেছে?”
পোস্টের সঙ্গে তিনি হাসনাতের ছাত্রলীগ সংযোগ প্রমাণ করার দাবি করে কিছু ছবি ও স্ক্রিনশট শেয়ার করেন।
ছাত্রলীগ সংযোগের দাবির সত্যতা
তবে পরদিন যুগান্তর–এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, রুমিন শেয়ার করা ছাত্রলীগের প্যাড ও সংযোগের তথ্যে ভুয়া তথ্য ব্যবহার করা হয়েছে। অর্থাৎ হাসনাতের ছাত্রলীগের শীর্ষ পদে থাকার প্রমাণ মিলেনি।
(সূত্র: যুগান্তর)
হাসনাতের জনপ্রিয়তা ও বিতর্ক
হাসনাত আবদুল্লাহ গত বছর থেকেই ছাত্রজনতার কাছে পরিচিতি পেয়েছেন “ক্যাপ্টেন বাংলাদেশ” নামে। তার নেতৃত্বে বিভিন্ন আন্দোলনে আপোষহীন অবস্থান লক্ষ্য করা গেছে। ফলে সমর্থকদের মতে, আওয়ামী লীগের পরিকল্পিত একাধিক চাল তিনি ভেস্তে দিয়েছেন।
অন্যদিকে রুমিনের সমর্থকদের অভিযোগ, অতীতে হাসনাত ছাত্রলীগের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এবং এখন বিএনপিকে বিভ্রান্ত করতে রাজনৈতিক নাটক করছেন।
বিশ্লেষকরা কী বলছেন?
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ঘটনাটি প্রমাণ করে বিএনপির ভেতরেও গুরুতর বিভক্তি রয়েছে। একপক্ষ আওয়ামী লীগসুলভ ভাষা ও ট্যাগ ব্যবহার করছে, অন্যপক্ষ নিজেদের আপোষহীন আন্দোলনের রক্ষক হিসেবে তুলে ধরছে।
ব্লগার পিনাকী ভট্টাচার্য এ প্রসঙ্গে মন্তব্য করেছেন, “হাসনাতের মতো নেতাদের আপোষহীন অবস্থানই জুলাই আন্দোলনের চেতনাকে বাঁচিয়ে রেখেছে। অন্যদিকে বিএনপি নেতাদের ভাষায় এখন আওয়ামী লীগীয় ছাপ স্পষ্ট।”
সামাজিক মাধ্যমে এখন বড় প্রশ্ন ঘুরছে—
রুমিন ফারহানা কি সত্যিই হাসনাতকে যথাযথভাবে চ্যালেঞ্জ করেছেন, নাকি ব্যক্তিগত আক্রমণে গিয়ে বিএনপির ভেতরের বিভক্তি আরও প্রকট করে তুলেছেন?
আর হাসনাত কি আদতে আপোষহীন বিপ্লবী, নাকি অতীতের মতো আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ রাজনীতির অংশ ছিলেন?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে এই দ্বন্দ্ব আরও দিন গরম বিষয় হয়ে থাকবে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক মহল।