বিগত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশে “আনঅফিসিয়াল ফোন বন্ধ হওয়া” নিয়ে অনেক গুজব শোনা গেলেও, এবার বিষয়টি বেশ গুরত্বপূর্ণ। টেকনোলোজি এনালিস্টদের মতে, আগামী ১৬ই ডিসেম্বর থেকে বিটিআরসি (BTRC) আনঅফিসিয়াল হ্যান্ডসেট বা গ্রে মার্কেটের ফোনের ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে যাচ্ছে।
আপনি যদি বর্তমানে কোনো আনঅফিসিয়াল ফোন ব্যবহার করেন বা নতুন ফোন কেনার পরিকল্পনা করছেন, তবে এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য অত্যন্ত জরুরী। চলুন জেনে নিই, আসলেই কী ঘটতে যাচ্ছে এবং এর প্রভাব আপনার ওপর কীভাবে পড়বে।
আনঅফিসিয়াল ফোন নিয়ে নতুন নিয়ম কী?
সহজ কথায়, আগামী ১৬ই ডিসেম্বরের পর থেকে যদি কেউ বাজারে থাকা নতুন কোনো আনঅফিসিয়াল ফোন কেনেন, তবে সেই ফোনে বাংলাদেশের কোনো সিম কার্ড কাজ করবে না।
-
কী করা যাবে: ফোনের ওয়াইফাই (Wi-Fi), গেমিং, হোয়াটসঅ্যাপ এবং অন্যান্য অফলাইন কাজ স্বাভাবিকভাবেই করা যাবে।
-
কী করা যাবে না: কোনো মোবাইল অপারেটরের সিম কার্ড কাজ করবে না, অর্থাৎ আপনি কল করতে বা মোবাইল ডেটা ব্যবহার করতে পারবেন না।
এটি অনেকটা পাকিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতির মতো, যেখানে আনঅফিসিয়াল ফোনে সিম নেটওয়ার্ক সম্পূর্ণ ব্লক করে দেওয়া হয়।
বর্তমান ব্যবহারকারীদের কী হবে?
সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো যাঁরা বর্তমানে আনঅফিসিয়াল ফোন ব্যবহার করছেন, তাঁদের ফোনের কী হবে? ভয়ের কিছু নেই, আপনার জন্য স্বস্তির খবর আছে।
-
নিরাপদ থাকার উপায়: যদি আপনি ১৬ই ডিসেম্বরের আগে আপনার আনঅফিসিয়াল ফোনে অন্তত একবার বাংলাদেশি কোনো সিম কার্ড প্রবেশ করিয়ে সচল রাখেন, তবে আপনার ফোনটি অটোমেটিক্যালি রেজিস্ট্রেশন হয়ে যাবে।
-
ডেডলাইন: ১৫ই ডিসেম্বর রাত ১১:৫৯ মিনিটের মধ্যে ফোনে সিম এক্টিভ করলেই সেটি বিটিআরসি-র ডেটাবেজে তালিকাভুক্ত হয়ে যাবে এবং ভবিষ্যতে বন্ধ হবে না।
বিশেষ টিপস: আপনি যদি কোনো আনঅফিসিয়াল ফোন কেনার পরিকল্পনা করে থাকেন, তবে ১৬ তারিখের আগেই কিনে সিম এক্টিভ করে ফেলা বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
বিদেশ থেকে আনা বা গিফট পাওয়া ফোনের নিয়ম কী?
অনেকেই বিদেশ থেকে ফোন নিয়ে আসেন বা আত্মীয়-স্বজনের কাছ থেকে গিফট পান। নতুন নিয়মে তাঁদের জন্যও নির্দিষ্ট গাইডলাইন আসছে।
-
রিসিট সংরক্ষণ: বিদেশ থেকে ফোন কিনলে অবশ্যই ক্রয়ের রিসিট বা প্রমাণপত্র সাথে রাখতে হবে।
-
রেজিস্ট্রেশন প্রসেস: দেশে আসার পর নির্দিষ্ট নথিপত্র দিয়ে বিটিআরসি-র পোর্টালে ফোনটি রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। রেজিস্ট্রেশন সফল হলেই কেবল সিম কার্ড সচল হবে।
কেন সরকার আনঅফিসিয়াল ফোন বন্ধ করছে?
সরকার ও বিটিআরসি-র এই উদ্যোগের পেছনে প্রধানত দুটি কারণ রয়েছে:
-
রাজস্ব বৃদ্ধি: আনঅফিসিয়াল বা গ্রে মার্কেটের ফোনের কারণে সরকার প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারায়। এই ফোনগুলো ট্যাক্স ফাঁকি দিয়ে দেশে আসে।
-
দেশীয় শিল্পরক্ষা: দেশে বর্তমানে স্যামসাং, শাউমি (Xiaomi), রিয়েলমি-র মতো ব্র্যান্ডগুলোর নিজস্ব ফ্যাক্টরি রয়েছে। আনঅফিসিয়াল ফোনের দাপটে অফিশিয়াল ফোনের বিক্রি কমে যায়, যা এই ইকোসিস্টেমের জন্য ক্ষতিকর।
সাধারণ গ্রাহকদের ওপর এর প্রভাব
এই সিদ্ধান্তের ফলে সাধারণ মানুষের ওপর মিশ্র প্রভাব পড়তে পারে। নিচে একটি ছকের মাধ্যমে তা তুলে ধরা হলো:
| ইতিবাচক দিক | নেতিবাচক দিক |
| সরকারের রাজস্ব বাড়বে এবং দেশের উন্নয়ন হবে। | অফিশিয়াল ফোনের দাম তুলনামূলক বেশি, তাই গ্রাহকের খরচ বাড়বে। |
| ফোন চুরির প্রবণতা কমবে (নেটওয়ার্ক কাজ না করায় চোর ফোন বিক্রি করতে পারবে না)। | আইকিউ (iQOO), গুগল পিক্সেলের মতো জনপ্রিয় ব্র্যান্ডগুলো অফিশিয়ালি দেশে নেই, তাই এগুলো পাওয়া দুষ্কর হবে। |
| অফিশিয়াল ফোনের ওয়ারেন্টি সেবা নিশ্চিত হবে। | কম দামে ভালো ফিচারের ফোন (Value for Money) পাওয়ার সুযোগ কমে যাবে। |
আমাদের মতামত
দীর্ঘদিন ধরে টেক মার্কেট পর্যবেক্ষণের অভিজ্ঞতা থেকে বলা যায়, এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলে স্মার্টফোন মার্কেটে বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে। শাওমি বা অন্যান্য ব্র্যান্ড গ্লোবালি ১০০টি মডেল রিলিজ করলেও বাংলাদেশে অফিশিয়ালি আনে মাত্র ৫-৬টি মডেল। আনঅফিসিয়াল মার্কেট বন্ধ হলে গ্রাহকদের পছন্দের তালিকা বা “চয়েস অপশন” অনেক কমে যাবে। তবে দেশের স্বার্থে এবং আইনি জটিলতা এড়াতে অফিশিয়াল ফোন ব্যবহার করাই সব সময় নিরাপদ।
সচরাচর জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন
প্রশ্ন: ১৬ তারিখের পর কি আমার বর্তমান আনঅফিসিয়াল ফোন বন্ধ হয়ে যাবে?
উত্তর: না, যদি আপনি ১৬ তারিখের আগে ফোনে সিম ভরে একবার ব্যবহার করেন, তবে সেটি বন্ধ হবে না।
প্রশ্ন: ওয়াইফাই দিয়ে কি আনঅফিসিয়াল ফোন চালানো যাবে?
উত্তর: হ্যাঁ, সিম নেটওয়ার্ক ছাড়া বাকি সব কিছু (ইন্টারনেট ব্রাউজিং, গেম খেলা) আগের মতোই করা যাবে।
প্রশ্ন: আনঅফিসিয়াল ফোন কি এখন কেনা উচিত?
উত্তর: আপনি যদি ১৬ই ডিসেম্বরের আগে সিম এক্টিভ করতে পারেন, তবে কিনতে পারেন। অন্যথায় অফিশিয়াল ফোন কেনাই শ্রেয়।