কপিরাইট কি? কপিরাইটের প্রয়োজনীয়তা ও কপিরাইট–পেটেন্টের পার্থক্য

আপনার লেখা গল্প, তোলা ছবি, বা তৈরি করা ভিডিও কি অন্য কেউ নিজের নামে চালিয়ে দিচ্ছে? অনলাইনে কন্টেন্ট চুরির এই যুগে আপনার সৃজনশীলতার বা মেধাসম্পদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে কপিরাইট (Copyright) সম্পর্কে জানা অত্যন্ত জরুরি।

আজকের এই আর্টিকেলে আমরা সহজ ভাষায় জানব কপিরাইট কি, এটি কিভাবে কাজ করে এবং বাংলাদেশে কপিরাইট এর প্রয়োজনীয়তা কেন এত বেশি।

সহজ কথায় কপিরাইট (Copyright) কি?

 

কপিরাইট হলো এক ধরণের আইনি অধিকার বা সুরক্ষা কবচ। যখন কোনো ব্যক্তি নিজের মেধা বা শ্রম দিয়ে মৌলিক কোনো কাজ (যেমন: সাহিত্য, গান, নাটক, সিনেমা, সফটওয়্যার বা শিল্পকর্ম) সৃষ্টি করেন, তখন সেই কাজের ওপর তার যে একচ্ছত্র মালিকানা বা অধিকার জন্মায়, তাকেই কপিরাইট বলা হয়।

সহজভাবে বলতে গেলে, কপিরাইট নিশ্চিত করে যে, আপনার অনুমতি ছাড়া অন্য কেউ আপনার কাজ নকল, পরিবর্তন বা ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করতে পারবে না।

গুরুত্বপূর্ণ তথ্য: বাংলাদেশে “কপিরাইট আইন, ২০০০” (সংশোধিত ২০০৫) অনুযায়ী সৃজনশীল কাজের সুরক্ষা প্রদান করা হয়।

কপিরাইট এর প্রয়োজনীয়তা

 

অনেকেই মনে করেন কপিরাইট শুধুমাত্র বড় কোম্পানি বা বিখ্যাত শিল্পীদের জন্য। কিন্তু একজন সাধারণ কন্টেন্ট ক্রিয়েটর বা লেখকের জন্যেও এটি সমান গুরুত্বপূর্ণ। নিচে কপিরাইটের প্রধান ৫টি প্রয়োজনীয়তা আলোচনা করা হলো:

১. কাজের মালিকানা প্রমাণ করা (Proof of Ownership)

 

আপনার কাজের যদি কপিরাইট রেজিস্ট্রেশন করা থাকে, তবে এটি আইনত প্রমাণ করে যে আপনিই এই কাজের প্রকৃত মালিক। ভবিষ্যতে কেউ যদি আপনার কাজের মালিকানা দাবি করে, তবে কপিরাইট সার্টিফিকেট আপনার পক্ষে সবচেয়ে বড় হাতিয়ার হিসেবে কাজ করবে।

২. আর্থিক সুবিধা নিশ্চিত করা (Financial Benefits)

 

কপিরাইট আপনাকে আপনার সৃষ্টি থেকে আয় করার একচ্ছত্র অধিকার দেয়। আপনি চাইলে আপনার গান, বই বা সফটওয়্যার বিক্রি করতে পারেন, অথবা রয়্যালটির বিনিময়ে অন্যকে ব্যবহারের অনুমতি দিতে পারেন। কপিরাইট ছাড়া আপনার কাজ অন্য কেউ বিক্রি করে টাকা আয় করলে আপনি কোনো আইনি ব্যবস্থা নিতে পারবেন না।

৩. চুরি বা নকল প্রতিরোধ (Prevention of Theft)

 

ইন্টারনেটে কন্টেন্ট চুরি বা পাইরেসি একটি বড় সমস্যা। আপনার কাজের কপিরাইট থাকলে, কেউ যদি আপনার অনুমতি ছাড়া তা ব্যবহার করে বা নিজের নামে চালিয়ে দেয়, তবে আপনি তার বিরুদ্ধে আইনি নোটিশ পাঠাতে পারেন এবং ক্ষতিপূরণ দাবি করতে পারেন। এটি অন্যদের আপনার কাজ চুরি করতে নিরুৎসাহিত করে।

৪. সৃজনশীলতাকে উৎসাহিত করা

 

যখন একজন স্রষ্টা জানেন যে তার কাজের আইনি সুরক্ষা আছে এবং তিনি এটি থেকে আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারবেন, তখন তিনি নতুন কিছু সৃষ্টি করতে উৎসাহী হন। কপিরাইট মূলত সমাজের সৃজনশীল ও মেধাবী মানুষদের কাজের স্বীকৃতি দেয়।

৫. আন্তর্জাতিক সুরক্ষা (International Protection)

 

বাংলাদেশ বার্ন কনভেনশন (Berne Convention)-এর সদস্য। এর অর্থ হলো, আপনি যদি বাংলাদেশে আপনার কাজের কপিরাইট বা মেধাস্বত্ব নিশ্চিত করেন, তবে বিশ্বের ১৮০টিরও বেশি দেশে আপনার কাজের সুরক্ষা বলবৎ থাকবে।

কপিরাইট ও পেটেন্ট-এর মধ্যে পার্থক্য কী?

 

অনেকেই এই দুটি বিষয় গুলিয়ে ফেলেন। এর জন্য এই পার্থক্যটি জানা জরুরি:

বিষয় কপিরাইট (Copyright) পেটেন্ট (Patent)
সুরক্ষার বিষয় সাহিত্য, গান, ভিডিও, কোড, আর্ট। নতুন আবিষ্কার বা বৈজ্ঞানিক ফর্মুলা।
মেয়াদ (বাংলাদেশে) প্রণেতার মৃত্যুর পর ৬০ বছর পর্যন্ত। সাধারণত ২০ বছর।
উদ্দেশ্য সৃজনশীল কাজ রক্ষা করা। নতুন আইডিয়া বা প্রযুক্তি রক্ষা করা।

শেষ কথা

 

বর্তমান ডিজিটাল যুগে আপনার মেধা ও পরিশ্রমের ফল অন্য কেউ ভোগ করবে, এটা নিশ্চয়ই আপনি চান না? তাই নিজের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হন। কপিরাইট কি এবং এর প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করে আপনার সৃজনশীল কাজগুলোকে সুরক্ষিত রাখুন। মনে রাখবেন, আপনার সৃষ্টি আপনারই সম্পদ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top