লাল গরু, দাজ্জালের আগমন ও আল-আকসা ধ্বংসের নীলনকশা

জেরুজালেমের পবিত্র আল-আকসা মসজিদ কি ধ্বংসের মুখে? টেক্সাস থেকে ইসরায়েলে নিয়ে আসা ৫টি লাল গরু বা ‘রেড হেইফার’ (Red Heifer) কেন বিশ্বজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি করছে? ইহুদি ও ইভানজেলিক্যাল খ্রিস্টানদের মতে, এই লাল গরু কুরবানিই সেই চাবিকাঠি, যা তৃতীয় মন্দির (Third Temple) নির্মাণ এবং তাদের মসিহ বা ‘দাজ্জাল’-এর আগমনের পথ প্রশস্ত করবে। এই আর্টিকেলে আমরা জানবো লাল গরু রহস্য, আল-আকসার ভবিষ্যৎ এবং এর পেছনের গভীর ধর্মীয় ও ভূ-রাজনৈতিক সমীকরণ।

লাল গরু ও টেম্পল মাউন্ট সম্পর্ক

 

  • লাল গরু (Red Heifer): বাইবেল ও তোরাহ অনুযায়ী একটি নিখুঁত লাল গাভী, যা পবিত্রকরণের জন্য জরুরি।

  • তৃতীয় মন্দির: ইহুদিদের বিশ্বাস, আল-আকসার স্থানেই তাদের তৃতীয় মন্দির নির্মিত হবে।

  • দাজ্জাল বা মসিহ: ইহুদিরা তাদের মসিহের জন্য অপেক্ষা করছে, যাকে মুসলিমরা দাজ্জাল হিসেবে চিহ্নিত করে।

  • বর্তমান অবস্থা: টেক্সাস থেকে গরু আনা হয়েছে এবং কুরবানির প্রস্তুতি চলছে।

লাল গরু বা ‘রেড হেইফার’ কেন এত গুরুত্বপূর্ণ?

 

ইহুদি ধর্মমতে, জেরুজালেমে তৃতীয় মন্দির নির্মাণের আগে ইহুদি পুরোহিত এবং জনগণকে পবিত্র হতে হবে। আর এই পবিত্র হওয়ার একমাত্র উপায় হলো একটি নিখুঁত লাল গরুর ছাই পানির সাথে মিশিয়ে শরীরে ছিটানো।

বাইবেলের বুক অব নাম্বারস (Book of Numbers) এবং ইহুদি মৌখিক আইন মিশনা (Mishnah) অনুযায়ী এই গরুর কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্য থাকতে হবে: ১. সম্পূর্ণ লাল রঙ: এর গায়ে কোনো সাদা বা কালো পশম থাকা যাবে না। ২. নিখুঁত: এটি কোনো খুঁত বা রোগমুক্ত হতে হবে। ৩. শ্রমমুক্ত: এই গরু দিয়ে কখনো হাল চাষ বা অন্য কোনো কাজ করানো হয়নি।

পবিত্র কুরআনের সূরা বাকারার ৬৭-৭৩ আয়াতেও বনি ইসরাঈলের এমন এক গরুর ঘটনার উল্লেখ রয়েছে, যা তাদের হঠকারিতার কারণে খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছিল। বর্তমানে ইসরায়েলের ‘দ্য টেম্পল ইনস্টিটিউট’ টেক্সাস থেকে প্রায় ৫.৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ৫টি লাল গরু আমদানি করেছে, যা ২০২৪ সাল নাগাদ কুরবানির উপযুক্ত (৩ বছর বয়স) হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

আল-আকসা ধ্বংসের ষড়যন্ত্র ও টেম্পল মাউন্ট

 

ইহুদি, খ্রিস্টান ও ইসলাম—তিন ধর্মের কাছেই জেরুজালেম একটি পবিত্র স্থান। ইহুদিরা আল-আকসা চত্বরকে ‘টেম্পল মাউন্ট’ বলে ডাকে। তাদের বিশ্বাস:

  • নবী সুলাইমান (আ.) এখানে প্রথম মন্দির নির্মাণ করেছিলেন।

  • বর্তমানে যেখানে আল-আকসা মসজিদ ও ডোম অব দ্য রক অবস্থিত, ঠিক সেখানেই তাদের তৃতীয় মন্দির নির্মাণ করতে হবে।

  • মন্দির নির্মাণের আগে আল-আকসা মসজিদ অপসারণ বা ধ্বংস করা তাদের ধর্মীয় লক্ষ্য।

বর্তমান পরিস্থিতি: ‘দ্য টেম্পল ইনস্টিটিউট’ ইতোমধ্যে মন্দিরের নকশা চূড়ান্ত করেছে, পুরোহিতদের পোশাক এবং উপাসনার পাত্র তৈরি করেছে। এমনকি মন্দিরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের জন্য হীরা দিয়ে পাথর কাটার কাজও সম্পন্ন হয়েছে। তাদের দাবি, এখন শুধু লাল গরু কুরবানি দিয়ে পবিত্র হওয়ার অপেক্ষা।

️‍️ দাজ্জালের আগমন বনাম ইহুদিদের মসিহ

 

এখানেই ধর্মতাত্ত্বিক সংঘাতের মূল বিন্দু। ইহুদি এবং খ্রিস্টান জায়নবাদীরা মনে করে, লাল গরু কুরবানি এবং মন্দির নির্মাণ সম্পন্ন হলেই তাদের ‘মসিহ’ পৃথিবীতে আসবেন।

  • ইহুদি বিশ্বাস: তাদের মসিহ এসে ইহুদিদের বিশ্বনেতৃত্ব দেবেন এবং অ-ইহুদিরা তাদের অধীনস্থ হবে।

  • খ্রিস্টান ইভানজেলিক্যাল বিশ্বাস: মসিহ (যিশু) পুনরায় আসবেন, তবে তার আগে ইহুদি মন্দির নির্মিত হতে হবে।

  • মুসলিম বিশ্বাস: মুসলিমরা মনে করে, ইহুদিরা যার জন্য অপেক্ষা করছে, তিনি আসলে হযরত ঈসা (আ.) নন, বরং তিনি হলেন ভণ্ড মসিহ বা দাজ্জাল। দাজ্জাল নিজেকে ঈশ্বর দাবি করবে এবং পৃথিবীজুড়ে অরাজকতা সৃষ্টি করবে।

হামাসের মুখপাত্র এক ভিডিও বার্তায় ৭ই অক্টোবরের হামলার অন্যতম কারণ হিসেবে এই ‘লাল গরু আমদানি’র কথা উল্লেখ করেছিলেন, যা মুসলিম বিশ্বে এই বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ বাড়িয়ে দিয়েছে।

⚔️ ভূ-রাজনীতি এবং গোপন মৈত্রী

 

পশ্চিমা বিশ্বের প্রভাবশালী খ্রিস্টান গোষ্ঠী, বিশেষ করে ‘ক্রাই ফর জায়ন’ (Cry For Zion) এবং ইহুদিদের ‘টেম্পল মাউন্ট মুভমেন্ট’ একজোট হয়ে কাজ করছে। তাদের লক্ষ্য ভিন্ন হলেও বর্তমান উদ্দেশ্য এক—আল-আকসার জায়গায় মন্দির প্রতিষ্ঠা করা।

প্রস্তুতির ধাপসমূহ: ১. পুরোহিত নির্বাচন: হারুন (আ.)-এর বংশধর এমন ৯ জন পুরোহিতকে বাছাই করা হয়েছে যারা এই কুরবানি পরিচালনা করবেন। ২. স্থান নির্ধারণ: মাউন্ট অলিভস বা জয়তুন পাহাড়ের এমন একটি জায়গা কেনা হয়েছে, যেখান থেকে কুরবানির সময় সরাসরি আল-আকসা দেখা যায়। ৩. খননকার্য: প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণার নামে আল-আকসার নিচে দীর্ঘকাল ধরে খননকার্য চালানো হচ্ছে, যা মসজিদের ভিত্তিকে দুর্বল করে দিয়েছে।

শেষ কথা

 

লাল গরু কুরবানি কেবল একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, এটি মধ্যপ্রাচ্যের ভূ-রাজনীতিতে বারুদের স্তূপে আগুন দেওয়ার মতো ঘটনা হতে পারে। ইহুদিদের এই পদক্ষেপ আল-আকসা মসজিদকে সরাসরি হুমকির মুখে ফেলছে, যা মুসলিম বিশ্বের জন্য চূড়ান্ত রেড লাইন। ২০২৪ বা নিকট ভবিষ্যতে এই গরু কুরবানি দেওয়া হলে তা দাজ্জালের আবির্ভাবের পথ সুগম করছে কি না—তা সময়ই বলে দেবে। তবে বর্তমান ঘটনাপ্রবাহ নিঃসন্দেহে এক ভয়াবহ ভবিষ্যতের ইঙ্গিত দিচ্ছে।

আপনার কি মনে হয়? লাল গরু কুরবানি কি সত্যিই দাজ্জালের আগমনের চূড়ান্ত সংকেত? কমেন্টে আপনার মতামত জানান এবং আর্টিকেলটি শেয়ার করে সবাইকে সচেতন করুন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top