ক্লাউড স্টোরেজ কী? সুবিধা ও ফ্রি ব্যবহার

ফোনের মেমোরি ফুল হয়ে যাওয়ার নোটিফিকেশন দেখে বিরক্ত? অথবা ফোন হারিয়ে গেলে গুরুত্বপূর্ণ ছবি ও ফাইল হারানোর ভয় পাচ্ছেন? এই সমস্যার আধুনিক ও স্মার্ট সমাধান হলো ক্লাউড স্টোরেজ। আজকের এই আর্টিকেলে আমরা জানব ক্লাউড স্টোরেজ আসলে কী, এটি কতটা নিরাপদ এবং কীভাবে আপনি সম্পূর্ণ বিনামূল্যে এটি ব্যবহার করবেন।

ক্লাউড স্টোরেজ কি?

 

সহজ ভাষায়, ক্লাউড স্টোরেজ কি? এটি হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে আপনার ডাটা (ছবি, ভিডিও, ডকুমেন্ট) আপনার নিজস্ব ডিভাইসে (হার্ডডিস্ক বা মেমোরি কার্ড) সেভ না করে, অন্য কোনো বিশ্বস্ত কোম্পানির শক্তিশালী সার্ভারে জমা রাখার পদ্ধতি।

অর্থাৎ, আপনার ফাইলটি আপনার পকেটে না থেকে ইন্টারনেটে সুরক্ষিত থাকে, যা আপনি প্রয়োজনমতো যেকোনো সময় ডাউনলোড বা ব্যবহার করতে পারেন। এটিকে ব্যাংকের লকারের সাথে তুলনা করা যেতে পারে—যেখানে আপনি আপনার সম্পদ জমা রাখেন এবং যেকোনো শাখা থেকে তা তুলতে পারেন।

ক্লাউড স্টোরেজ কোথায় সংরক্ষিত থাকে?

 

অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগে, ক্লাউড স্টোরেজ কোথায় সংরক্ষিত থাকে? “ক্লাউড” বা মেঘ বলা হলেও আপনার ডাটা কিন্তু আকাশে ভেসে বেড়ায় না।

আপনার আপলোড করা সমস্ত ডাটা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে অবস্থিত বিশাল বিশাল ডাটা সেন্টার (Data Centers)-এ ফিজিক্যাল সার্ভারে সংরক্ষিত থাকে। Google, Microsoft বা Amazon-এর মতো কোম্পানিগুলো হাজার হাজার হার্ড ড্রাইভ ও সার্ভার দিয়ে এই ডাটা সেন্টারগুলো তৈরি করে। নিরাপত্তার জন্য তারা সাধারণত আপনার ফাইলের একাধিক কপি ভিন্ন ভিন্ন লোকেশনে সেভ করে রাখে, যাতে একটি সার্ভার নষ্ট হলেও আপনার ডাটা হারিয়ে না যায়।

ক্লাউড স্টোরেজ এর উদাহরণ

 

বর্তমানে ব্যক্তিগত এবং ব্যবসায়িক কাজে প্রচুর ক্লাউড সার্ভিস ব্যবহৃত হচ্ছে। জনপ্রিয় কিছু ক্লাউড স্টোরেজ এর উদাহরণ নিচে দেওয়া হলো:

  • Google Drive (গুগল ড্রাইভ): অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারীদের জন্য সবচেয়ে জনপ্রিয়।

  • iCloud (আইক্লাউড): অ্যাপল বা আইফোন ব্যবহারকারীদের জন্য।

  • Dropbox (ড্রপবক্স): ফাইল শেয়ারিংয়ের জন্য অত্যন্ত জনপ্রিয়।

  • Microsoft OneDrive: উইন্ডোজ পিসি ব্যবহারকারীদের জন্য সেরা।

  • MEGA: বেশি ফ্রি স্টোরেজ এবং এনক্রিপশনের জন্য পরিচিত।

ক্লাউড স্টোরেজ এর সুবিধা

 

হার্ডডিস্ক বা পেনড্রাইভের চেয়ে ক্লাউড কেন ভালো? চলুন দেখে নিই ক্লাউড স্টোরেজ এর সুবিধা গুলো:

  • যেকোনো স্থান থেকে এক্সেস: ইন্টারনেট থাকলে আপনি পৃথিবীর যেকোনো প্রান্ত থেকে আপনার ফাইল দেখতে ও এডিট করতে পারবেন।

  • ডাটা রিকভারি ও ব্যাকআপ: ফোন চুরি হলে বা হার্ডডিস্ক ক্র্যাশ করলেও আপনার ডাটা ক্লাউডে সুরক্ষিত থাকে। নতুন ডিভাইসে লগ-ইন করলেই সব ফিরে পাবেন।

  • ফাইল শেয়ারিং: বিশাল সাইজের ফাইল ইমেইলে পাঠানো সম্ভব হয় না। ক্লাউড লিংকের মাধ্যমে সেকেন্ডেই তা শেয়ার করা যায়।

  • খরচ সাশ্রয়ী: ফিজিক্যাল হার্ডওয়্যার কেনার এবং রক্ষণাবেক্ষণের খরচ নেই।

  • অটোমেটিক সিঙ্ক: ফোনে ছবি তোলার সাথে সাথেই তা অটোমেটিক্যালি ক্লাউডে সেভ হয়ে যায় (যদি অপশন চালু থাকে)।

সেরা ফ্রি ক্লাউড স্টোরেজ সার্ভিস

 

আপনি যদি টাকা খরচ না করে সেবাটি ব্যবহার করতে চান, তবে বেশ কিছু কোম্পানি ক্লাউড স্টোরেজ ফ্রি দিয়ে থাকে। যেমন:

  1. Google Drive: প্রতিটি গুগল অ্যাকাউন্টের সাথে ১৫ জিবি পর্যন্ত ফ্রি।

  2. MEGA: অ্যাকাউন্ট খুললেই ২০ জিবি ফ্রি স্টোরেজ দেয়।

  3. pCloud: শুরুতে ১০ জিবি পর্যন্ত ফ্রি স্টোরেজ পাওয়া যায়।

  4. OneDrive: মাইক্রোসফট তাদের ব্যবহারকারীদের ৫ জিবি ফ্রি দেয়।

শেষ কথা

 

প্রযুক্তি এখন আমাদের হাতের মুঠোয়। মেমোরি কার্ডের ওপর নির্ভর না করে আপনার গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র বা স্মৃতির অ্যালবাম আজই ক্লাউড স্টোরেজে ব্যাকআপ নেওয়া শুরু করুন। এটি কেবল আপনার ফোনের জায়গাই বাড়াবে না, বরং ডাটা হারানোর দুশ্চিন্তা থেকেও মুক্তি দেবে।

সচরাচর জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন (FAQs)

 

প্রশ্ন: ক্লাউড স্টোরেজ কি নিরাপদ?

উত্তর: হ্যাঁ, নির্ভরযোগ্য কোম্পানিগুলো (যেমন Google, Microsoft) ডাটা এনক্রিপশন ব্যবহার করে, যা হ্যাকিং থেকে সুরক্ষা দেয়। তবে শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা জরুরি।

প্রশ্ন: ইন্টারনেট ছাড়া কি ক্লাউড স্টোরেজ ব্যবহার করা যায়?

উত্তর: ক্লাউড থেকে ফাইল ডাউনলোড বা আপলোড করতে ইন্টারনেটের প্রয়োজন হয়। তবে ‘Offline Access’ মুড চালু থাকলে ডাউনলোড করা ফাইল ইন্টারনেট ছাড়াও দেখা যায়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top