প্রবাসী ভোটার- জানুন কোন দেশে কবে নিবন্ধন, কীভাবে দিবেন ভোট?

জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রবাসীদের ভোট দেয়ার সুযোগ এবার হাতের মুঠোয়। ‘পোস্টাল ভোট বিডি’ অ্যাপ ব্যবহার করে বিশ্বের যেকোনো প্রান্ত থেকে কীভাবে ভোটার নিবন্ধন করবেন এবং পোস্টাল ব্যালটে ভোট দেবেন তার বিস্তারিত জানুন এই আর্টিকেলে।

দীর্ঘদিনের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য চালু হয়েছে পোস্টাল ভোট ব্যবস্থা। নির্বাচন কমিশনের নতুন অ্যাপ ‘Postal Vote BD’-এর মাধ্যমে এখন বিদেশ থেকেও জাতীয় নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করা সম্ভব।

আপনি যদি বিদেশে অবস্থান করেন এবং আগামী নির্বাচনে ভোট দিতে চান, তবে এখনই জেনে নিন কীভাবে অ্যাপে নিবন্ধন করবেন, কোন দেশের জন্য কবে সময়সীমা এবং ভোট দেয়ার সঠিক নিয়ম। এই আর্টিকেলে আমি ধাপে ধাপে পুরো প্রক্রিয়াটি আলোচনা করেছি।

পোস্টাল ভোট বিডি (Postal Vote BD) অ্যাপ কী?

 

নির্বাচন কমিশন (EC) প্রবাসীদের ভোটদান সহজ করতে ‘Postal Vote BD’ নামে একটি বিশেষ মোবাইল অ্যাপ চালু করেছে। গুগল প্লে স্টোর বা অ্যাপল অ্যাপ স্টোর থেকে এটি ডাউনলোড করে প্রবাসীরা ভোটার হিসেবে নিজেদের নাম নিবন্ধন করতে পারবেন। এই অ্যাপের মাধ্যমেই ব্যালট পেপারের জন্য আবেদন করতে হবে।

বিশেষ দ্রষ্টব্য: অ্যাপটি ব্যবহারের জন্য আপনার ফোনে লোকেশন অন থাকতে হবে। বাংলাদেশ থেকে এই অ্যাপে ঢোকা যাবে না, এটি শুধুমাত্র প্রবাসীদের জন্য।

অঞ্চলভেদে প্রবাসী ভোটার নিবন্ধনের সময়সূচি

 

নির্বাচন কমিশন বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের জন্য আলাদা আলাদা নিবন্ধনের সময় নির্ধারণ করেছে। আপনার অঞ্চলের সময়সীমা মিস করলে আপনি আর নিবন্ধন করতে পারবেন না। নিচের তালিকাটি খেয়াল করুন:

  • পূর্ব এশিয়া, আফ্রিকা ও দক্ষিণ আমেরিকা: ১৯ নভেম্বর – ২৩ নভেম্বর।

  • উত্তর আমেরিকা ও ওশেনিয়া: ২৪ নভেম্বর – ২৮ নভেম্বর।

  • ইউরোপ (৪২টি দেশ): ২১ নভেম্বর – ৩ ডিসেম্বর (ভিডিওতে ২৯ নভেম্বরের উল্লেখ থাকলেও লেটেস্ট আপডেট অনুযায়ী এটি ২১ থেকে শুরু হতে পারে, তবে ভিডিওর তথ্যমতে ২৯ নভেম্বর থেকে ৩ ডিসেম্বর)।

  • সৌদি আরব: ৪ ডিসেম্বর – ৮ ডিসেম্বর।

  • মধ্যপ্রাচ্য (সৌদি আরব ছাড়া অন্যান্য দেশ): ১৪ ডিসেম্বর – ১৮ ডিসেম্বর (ভিডিও এবং আপডেট অনুযায়ী ভিন্ন হতে পারে, তবে ভিডিওতে ৮ ডিসেম্বরের পর থেকে শুরুর ইঙ্গিত রয়েছে)।

(বি.দ্র.: ভিডিওর তথ্য ও নির্বাচন কমিশনের বিজ্ঞপ্তির মধ্যে তারিখের সামান্য পরিবর্তন হতে পারে, তাই অ্যাপে ঢুকেই লেটেস্ট ডেট চেক করে নিন।)

নিবন্ধনের জন্য কী কী লাগবে?

 

অ্যাপে রেজিস্ট্রেশন শুরু করার আগে নিচের ডকুমেন্টগুলো হাতের কাছে রাখুন: ১. স্মার্টফোন ও ইন্টারনেট: অ্যাপটি চালানোর জন্য। ২. আন্তর্জাতিক সিম কার্ড: ওটিপি (OTP) ভেরিফিকেশনের জন্য। ৩. এনআইডি কার্ড (NID): জাতীয় পরিচয়পত্রের অরিজিনাল কপি বা ছবি। ৪. পাসপোর্ট (Passport): বাধ্যতামূলক নয়, তবে থাকলে ভালো। ৫. বিদেশের ঠিকানা: যেখানে আপনার নামে পোস্টাল ব্যালট পাঠানো হবে।

ধাপে ধাপে অ্যাপে নিবন্ধনের নিয়ম

 

ভিডিওটিতে দেখানো গাইডলাইন অনুযায়ী নিবন্ধন প্রক্রিয়াটি নিচে তুলে ধরা হলো:

ধাপ ১: অ্যাপ ইন্সটল ও মোবাইল ভেরিফিকেশন

 

প্রথমে Postal Vote BD অ্যাপটি ওপেন করুন। আপনার ব্যবহৃত বিদেশি মোবাইল নম্বরটি দিন। ওই নম্বরে একটি ওটিপি (OTP) যাবে। কোডটি বসিয়ে নম্বর ভেরিফাই করুন।

ধাপ ২: এনআইডি (NID) আপলোড

 

ভেরিফিকেশনের পর আপনার এনআইডি কার্ডের সামনের ও পেছনের অংশের পরিষ্কার ছবি তুলে আপলোড করুন।

ধাপ ৩: ফেস ভেরিফিকেশন (Face Verification)

 

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ এটি। ক্যামেরা অন করে আপনার মুখের ছবি স্ক্যান করতে হবে। ডানে-বায়ে তাকিয়ে চোখের পলক ফেলে সিস্টেমকে নিশ্চিত করতে হবে যে আপনিই আসল ভোটার।

ধাপ ৪: পাসপোর্ট ও ঠিকানা প্রদান

 

এনআইডি ভেরিফাই হলে আপনার নাম ও ছবি ভেসে উঠবে। এরপর পাসপোর্টের ছবি (যদি থাকে) আপলোড করুন। সবশেষে, আপনি বিদেশে বর্তমানে যে ঠিকানায় থাকেন, সেই ঠিকানাটি নির্ভুলভাবে ইংরেজিতে লিখুন। এই ঠিকানাতেই নির্বাচন কমিশন আপনার ব্যালট পেপার পাঠাবে।

পোস্টাল ব্যালটে ভোট দেয়ার পদ্ধতি

 

নিবন্ধন সফল হলে এবং প্রতীক বরাদ্দের পর আপনার দেওয়া ঠিকানায় ডাকযোগে ব্যালট পেপার পাঠানো হবে।

ভোট দেয়ার নিয়মাবলী:

  • ব্যালট পেপার: খামের ভেতর ব্যালট পেপার পাবেন, যেখানে প্রার্থীদের নাম ও প্রতীক থাকবে।

  • ভোট প্রদান: আপনার পছন্দের প্রতীকের পাশে টিক (✓) বা ক্রস (×) চিহ্ন দিন। যদি কাউকে পছন্দ না হয়, তবে ‘না ভোট’ (No Vote) অপশনে টিক দিতে পারবেন।

  • ঘোষণাপত্র স্বাক্ষর: ব্যালটের সাথে একটি ঘোষণাপত্র (Declaration Form) থাকবে। সেখানে স্বাক্ষর করতে হবে যে, আপনি নিজেই এই ভোট দিয়েছেন। সতর্কতা: স্বাক্ষর না করলে ভোট বাতিল হবে।

ব্যালট ফেরত পাঠানোর নিয়ম

 

  • ভোট দেয়া শেষ হলে ব্যালট পেপারটি নির্ধারিত ‘রিটার্ন খামে’ ভরুন।

  • ঘোষণাপত্রটিও সাথে দিন।

  • খামটি আপনার নিকটস্থ পোস্ট অফিসে জমা দিন। এর জন্য কোনো টাকা লাগবে না (ডাকমাসুল আগে থেকেই পরিশোধ করা থাকে)।

  • সময়সীমা: নির্বাচনের দিন বিকেল ৪টার মধ্যে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে ব্যালট পৌঁছাতে হবে।

কিছু জরুরি সতর্কতা

 

  • একটি ভুল, ভোট বাতিল: ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর না থাকলে বা নির্ধারিত সময়ের পরে ব্যালট পৌঁছালে তা বাতিল বলে গণ্য হবে।

  • গোপনীয়তা: ব্যালট পেপারের ছবি তোলা বা সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করা দণ্ডনীয় অপরাধ।

  • সময় ব্যবস্থাপনা: ব্যালট আসতে এবং যেতে ১৫-৩০ দিন সময় লাগতে পারে। তাই হাতে ব্যালট পাওয়ার পরপরই ভোট দিয়ে দ্রুত পোস্ট করে দিন।

সচরাচর জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন

 

১. যাদের এনআইডি (NID) নেই তারা কি ভোট দিতে পারবে? উ: না, বর্তমানে শুধুমাত্র যাদের এনআইডি আছে, তারাই অ্যাপের মাধ্যমে নিবন্ধন করে ভোট দিতে পারবেন।

২. আমি কি অনলাইনে ভোট দিতে পারব? উ: না, রেজিস্ট্রেশন অনলাইনে হলেও ভোট দিতে হবে কাগজের ব্যালটে (পোস্টাল ব্যালট) এবং তা ডাকযোগে পাঠাতে হবে।

৩. ভোট পাঠাতে কি টাকা লাগবে? উ: না, রিটার্ন খামের ডাকমাসুল বাংলাদেশ সরকার বহন করবে। আপনি শুধু পোস্ট বক্সে ড্রপ করবেন।

প্রবাসীরা দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখেন, এখন দেশের নেতৃত্ব নির্বাচনেও তাদের ভূমিকা হবে প্রত্যক্ষ। আজই অ্যাপটি ডাউনলোড করুন এবং আপনার ভোটাধিকার নিশ্চিত করুন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top