দলের জন্য বড় বিপদ ডেকে আনছেন জনপ্রিয় বক্তারা!

মাওলানা দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর মতো ক্যারিশম্যাটিক বক্তার পর জামায়াতে ইসলামী এমন কোনো নেতা বা বক্তা তৈরি করতে পারেনি যিনি একই সাথে জনপ্রিয় ও বিশ্বাসযোগ্য। বর্তমানে জামায়াতের রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে শুরু করে ওয়াজের ময়দানেও মিথ্যা তথ্য ও বিতর্কিত মন্তব্য দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছে। বিশেষ করে মুফতি আমির হামজা ও তারেক মনোয়ারের মতো বক্তারা তাদের বেফাঁস মন্তব্যের কারণে দলের জন্য বড় বিপদ ডেকে আনছেন বলে মনে করছেন অনেকে।

মিথ্যাচার এবং ট্রোলের শিকার: আমির হামজা

একসময়ের তুমুল জনপ্রিয় বক্তা মুফতি আমির হামজা সম্প্রতি ভারতীয় নায়িকা রাশমিকা মান্দানার প্রসঙ্গ টেনে ‘রাশমিকা হুজুর’ নামে পরিচিতি পেয়েছেন। জামায়াত তাকে সতর্ক করার পরও তিনি তার ভুল থেকে শিক্ষা নেননি। বরং সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এসএম হলে আজান বন্ধ থাকার একটি সত্য ঘটনাকে তিনি মিথ্যার সাথে মিশিয়ে বিতর্ক তৈরি করেছেন।

আমির হামজা বলেন, ডাকসুতে শিবির প্যানেল জেতার পর আজান চালু হয়েছে, যা একটি ডাহা মিথ্যা কথা। প্রকৃতপক্ষে, ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পরদিন থেকেই সেখানে মাইকে আজান শুরু হয়। এই ধরনের মিথ্যাচার ছাত্রলীগের মতো প্রতিপক্ষকে তাদের অপকর্ম ঢাকার সুযোগ করে দিয়েছে। কমরেড মাহমুদ নামে একজন বিশ্লেষক লিখেছেন, “আমির হামজা সত্যের সাথে মিথ্যাকে মিশিয়ে ছাত্রলীগের জুলুমকে হালকা করে দিয়েছেন।”

তারেক মনোয়ার ও জামায়াতের নেতৃত্ব সংকট

শুধু আমির হামজাই নন, তারেক মনোয়ারের মতো বক্তারাও মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য দিয়ে ওয়াজ করে তরুণদের মধ্যে জামায়াত সম্পর্কে হাসাহাসির খোরাক যোগাচ্ছেন। তিনি কখনো নিজেকে রকেট বিশেষজ্ঞ, কখনো অক্সফোর্ডের শিক্ষক, কখনো ফুটবলার বলে দাবি করেন। এমনকি ডোনাল্ড ট্রাম্পকেও মুসলিম বানিয়ে দিয়েছেন। যদিও তিনি বেশ কয়েকবার ক্ষমা চেয়েছেন, তবুও তার মিথ্যাচার থামছে না। তার এসব বিতর্কিত মন্তব্যের কারণে দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে, যেখানে তার বাবা একজন এমপি ছিলেন এবং সাঈদীর শূন্যস্থান পূরণের একটা সুযোগ তার ছিল।

জামায়াতে একসময় মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, মাওলানা আব্দুস সুবহান, মাওলানা আবুল কালাম মোহাম্মদ ইউসুফের মতো উচ্চশিক্ষিত ও প্রাজ্ঞ আলেম নেতৃত্ব দিয়েছেন। অধ্যাপক গোলাম আযমের মতো বিশ্বমানের পণ্ডিতও ছিলেন। অথচ এখনকার বক্তাদের মিথ্যাচার নিয়ে প্রকাশ্যে ট্রোল করা হচ্ছে।

রাজনীতির জন্য আনফিট বক্তা: লেখকের পর্যবেক্ষণ

লেখক মাসুদ রানা মনে করেন, মুফতি আমির হামজা রাজনীতিতে একেবারেই আনফিট। কেবল জনপ্রিয়তার কারণে জামায়াত তাকে এমপি পদে মনোনয়ন দিয়েছে, যা দলের জন্য একটি বড় ঝুঁকি। তার মতে, আমির হামজা সোশ্যাল মিডিয়া পরিচালনা করার মতো ন্যূনতম যোগ্যতাও রাখেন না এবং সহজেই গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর ফাঁদে পড়তে পারেন।

মাসুদ রানা লিখেছেন, “জীবনেও কোনোদিন ফুটবল খেলেনি এমন ব্যক্তিকে জামাত গোল করার দায়িত্ব দিয়েছে।” তার মতে, জামায়াতের উচিত ছিল একজন জনপ্রিয় কিন্তু অদক্ষ নেতাকে নমিনেশন দেওয়ার আগে তাকে একটি স্মার্ট টিমের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ দেওয়া। যদি জামায়াত এই ধরনের বক্তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে না পারে, তবে আসন্ন নির্বাচনে দলের পরিশ্রম বৃথা যেতে পারে।

এতে বোঝাই যাচ্ছে যে, জামায়াতকে এখন নতুন করে ভাবতে হবে, কীভাবে তাদের বক্তাদের বক্তব্য নিয়ন্ত্রণ করা যায়। দলের উচিত হবে এমন আলেমদের সর্বোচ্চ পরিষদে স্থান দেওয়া যারা দ্বীন ও দুনিয়া উভয়ই বোঝেন এবং জামায়াতকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে পারেন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top