আরে বন্ধু! কেমন আছো? যদি তুমি বাংলাদেশের ছাত্ররাজনীতি বা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের খোঁজখবর রাখো, তাহলে তুমি নিশ্চয়ই জানো যে, ১৫ অক্টোবর ২০২৫ তারিখটা শুধু একটা সাধারণ দিন ছিল না। এটা ছিল ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা হওয়ার মতো একটা দিন! দীর্ঘ ৩৫টা বছর, হ্যাঁ ঠিক শুনেছো, প্রায় সাড়ে তিন দশক পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচন আবার ফিরে এসেছে। ভাবো তো, কতগুলো প্রজন্ম এই দিনটার জন্য অপেক্ষা করেছে!
আমি যখন এই খবরটা শুনি, আমার মনে হলো, আরে বাবা! এটা তো শুধু একটা নির্বাচন নয়, এটা যেন গণতন্ত্রের একটা উৎসব, ছাত্রসমাজের অধিকার ফিরে পাওয়ার একটা নতুন দিগন্ত! জুলাই ২০২৪-এর গণ-অভ্যুত্থানের পর, যখন দেশের বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্র সংসদ নির্বাচন শুরু হলো, তখন থেকেই সবাই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে তাকিয়ে ছিল। অবশেষে, সেই অপেক্ষার পালা শেষ। চলো, আজ আমরা এই ঐতিহাসিক চাকসু নির্বাচন ২০২৫-এর আদ্যোপান্ত জেনে নিই। সব প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব, যা তুমি জানতে চাও!
চাকসু নির্বাচন ২০২৫ শুধু একটি তারিখ নয়, এটি একটি আন্দোলনের ফল। এর পেছনে রয়েছে অনেক স্বপ্ন, অনেক আশা। কী ঘটেছিল সেদিন? চলো, একটু গভীরে যাই।
চাকসু নির্বাচন ২০২৫ কবে অনুষ্ঠিত হয়েছিল?
অবশেষে, বহু প্রতীক্ষিত চাকসু নির্বাচন ২০২৫ অনুষ্ঠিত হলো ১৫ অক্টোবর, ২০২৫ তারিখে। সকাল ৯টা থেকে শুরু হয়ে বিকাল ৪টা পর্যন্ত একটানা ভোটগ্রহণ চলে। ভাবো তো, কী উত্তেজনা! শিক্ষার্থীরা লাইনে দাঁড়িয়ে নিজেদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়েছে, ঠিক যেন একটা ছোটখাটো জাতীয় নির্বাচন! ️
কত বছর পর চাকসু নির্বাচন হয়েছে?
এই প্রশ্নের উত্তরটা শুনলে তোমার চোখ কপালে উঠতে পারে! জানো, দীর্ঘ ৩৫ বছর পর চাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে! শেষবার নির্বাচন হয়েছিল সেই ১৯৯০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি। মানে, আমাদের বাবা-মায়েরা বা হয়তো তাদেরও আগের প্রজন্ম এই অভিজ্ঞতা পেয়েছিল। তাই, এই নির্বাচনটা বর্তমান প্রজন্মের কাছে একটা সম্পূর্ণ নতুন অভিজ্ঞতা।
চাকসু নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা কত ছিল?
একটা বিশাল সংখ্যা! ২৭ হাজার ৫১৭ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। এর মধ্যে ছাত্রীর সংখ্যা ছিল ১১ হাজার ১৫৬ জন। নারী ভোটারদের এই সক্রিয় অংশগ্রহণ সত্যিই দারুণ একটা ব্যাপার, তাই না?
কতজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন?
কেন্দ্রীয় ও হল সংসদ মিলিয়ে মোট ৯০৮ জন প্রার্থী এই ঐতিহাসিক নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় সংসদের ২৬টি পদে ৪১৫ জন এবং হল সংসদে ৪৯৩ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। এতজন প্রার্থীর মধ্যে নিজের যোগ্য প্রতিনিধি খুঁজে বের করাও কিন্তু এক চ্যালেঞ্জ!
চাকসু নির্বাচনের প্রধান পদগুলোতে কতজন প্রার্থী ছিলেন?
মূল পদগুলো তো সব সময়ই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে। সহসভাপতি (ভিপি) পদে ২৪ জন, সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে ২২ জন এবং সহকারী সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে ২১ জন প্রার্থী একে অপরের বিরুদ্ধে লড়েছেন। কে হবে ভিপি, কে হবে জিএস – এই প্রশ্নগুলো নিয়ে ক্যাম্পাসে কত আলোচনা, কত জল্পনা-কল্পনা!
চাকসু নির্বাচনে ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক ছিল কি?
হ্যাঁ, এইবার একটা দারুণ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল! চাকসু নির্বাচনে প্রার্থীদের জন্য ডোপ টেস্ট (মাদক পরীক্ষা) বাধ্যতামূলক ছিল। মোট ৯৩৬ জন প্রার্থী এই পরীক্ষায় অংশ নেন এবং মজার ব্যাপার হলো, সবার রিপোর্টই নেগেটিভ এসেছে। এটা ছাত্ররাজনীতির স্বচ্ছতা আর ইতিবাচকতার দিকে একটা বড় পদক্ষেপ, আমি মনে করি।
চাকসু নির্বাচনে কোন পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণ ও গণনা করা হয়েছে?
ঐতিহ্য আর আধুনিকতার এক দারুণ মিশেল! ভোট গ্রহণ করা হয়েছে ব্যালট পেপারে, আর গণনা করা হয়েছে ওএমআর (অপটিক্যাল মার্ক রিডার) পদ্ধতিতে। প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজার ব্যালট পেপার প্রি-স্ক্যান করা হয়েছিল। এই আধুনিক পদ্ধতি নিশ্চয়ই দ্রুত এবং নির্ভুল ফলাফল দিতে সাহায্য করেছে।
চাকসু নির্বাচনে কয়টি ভোটকেন্দ্র ছিল?
পাঁচটি অনুষদ ভবনে মোট ১৫টি ভোটকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছিল। আর এই ১৫টি কেন্দ্রে ৬০টি কক্ষে ৬৮৯টি বুথে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। বিশাল এক কর্মযজ্ঞ, তাই না?
চাকসু নির্বাচনের ফলাফল কখন ঘোষণা হয়েছে?
নির্বাচন কমিশন জানিয়েছিল যে, ভোট গণনায় ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা সময় লাগতে পারে। তাই, সবাই আশা করছিল যে, ১৬ অক্টোবর ২০২৫ সকালে ফলাফল প্রকাশ করা হবে। সেই ঘোষণা এখন কেবল সময়ের অপেক্ষা।
চাকসু নির্বাচনে কোন প্যানেলগুলো প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে?
মোট ১৩টি প্যানেল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে, যার মধ্যে কিছু নাম বেশ পরিচিত। যেমন: সম্প্রীতির শিক্ষার্থী জোট (ছাত্রশিবির সমর্থিত), স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী সম্মিলন (গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ সমর্থিত), বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্র দল, বাম ছাত্র সংগঠনগুলোর দ্রোহ পর্ষদ, স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সার্বভৌম শিক্ষার্থী ঐক্য, এবং সর্বজনীন শিক্ষার্থী সংসদ। এই প্যানেলগুলোর মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই দেখা গেছে।
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট
চাকসু নির্বাচনটা কেন এত স্পেশাল, সেটা বুঝতে গেলে এর ইতিহাসের দিকে একটু তাকাতেই হবে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম চাকসু নির্বাচন হয়েছিল সেই ১৯৭০ সালে। তারপর নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে শেষ নির্বাচন হয় ১৯৯০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি। এরপর দীর্ঘ ৩৫টা বছর পার হয়ে গেছে, কিন্তু কোনো নির্বাচন হয়নি। ক্যাম্পাসগুলো তখন মূলত ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠন বা প্রভাবশালী মহলের দখলে ছিল। ছাত্রদের প্রকৃত দাবি-দাওয়া বা প্রতিনিধিত্বের সুযোগ প্রায় ছিলই না।
জুলাই ২০২৪-এর গণ-অভ্যুত্থানের পর যখন দেশে একটা পরিবর্তনের হাওয়া বইতে শুরু করে, তখন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবি জোরদার হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ডাকসু) এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের নির্বাচন এরই মধ্যে হয়ে গেছে, যেখানে ছাত্রশিবির-সমর্থিত প্যানেল অনেক পদেই জয়ী হয়েছে। এই ধারাবাহিকতাতেই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়েও এই ঐতিহাসিক নির্বাচনের আয়োজন করা হয়। এটা শুধু একটা নির্বাচন নয়, এটা যেন গণতন্ত্রের মূল সুরটা আবার ছাত্রসমাজের কানে বাজিয়ে দিল।
তফসিল থেকে ভোট গণনা
এবার একটু দেখে নিই, এই নির্বাচনটা কীভাবে ধাপে ধাপে সম্পন্ন হলো:
ডোপ টেস্ট
আমার মনে হয়, এইবারের চাকসু নির্বাচন ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক করার বিষয়টি একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত। এর মাধ্যমে ছাত্ররাজনীতিতে একটা ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে বলে আমি বিশ্বাস করি। মাদকাসক্তি থেকে মুক্ত একটা সুস্থ ছাত্রসমাজ গড়ে তোলার দিকে এটা একটা বড় পদক্ষেপ। এর জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য।
প্রার্থী ও প্যানেল: কারা ছিল মূল আকর্ষণ?
আগেই বলেছি, ১৩টি প্যানেল এবারের নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। প্রতিটি প্যানেলই নিজেদের মতো করে ছাত্রছাত্রীদের মন জয় করার চেষ্টা করেছে। ছাত্রশিবির সমর্থিত ‘সম্প্রীতির শিক্ষার্থী জোট’, গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ সমর্থিত ‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী সম্মিলন’, ছাত্রদল, বাম ছাত্র সংগঠনগুলোর ‘দ্রোহ পর্ষদ’ – সবাই ছিল মাঠে। এই প্রতিযোগিতাটাই কিন্তু গণতন্ত্রের সৌন্দর্য!
স্বচ্ছ ভোট গ্রহণ ও গণনা পদ্ধতি
এইবার কিন্তু স্বচ্ছতাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ব্যালট পেপারে ভোট হলেও, ওএমআর পদ্ধতিতে ভোট গণনা হওয়ায় দ্রুত আর নির্ভুল ফলাফল পাওয়া সম্ভব হয়েছে। আর সবচেয়ে ভালো দিক হলো, ভোট গণনার পুরো প্রক্রিয়া ১৪টি এলইডি স্ক্রিনের মাধ্যমে সরাসরি দেখানো হয়েছে! ভোট কক্ষে সিসি ক্যামেরা, স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স – সব মিলিয়ে একটা সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত করা হয়েছিল।
অভিযোগ আর বিতর্কের আড়ালে এক ঐতিহাসিক যাত্রা
যেকোনো বড় নির্বাচন মানেই কিছু অভিযোগ বা বিতর্ক থাকবে, তাই না? চাকসু নির্বাচন ২০২৫-ও এর ব্যতিক্রম ছিল না। নির্বাচনের দিন ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেল থেকে বেশ কিছু অভিযোগ উঠেছিল। যেমন: নির্বাচন কর্মকর্তার সই ছাড়া ব্যালট পেপারে ভোট দেওয়া, অমোচনীয় কালি সহজে উঠে যাওয়া, এবং ভোট গ্রহণে ধীরগতি। ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেলও অমোচনীয় কালি ব্যবহারের বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছিল।
এছাড়া, ‘বিশ্ব ইনসানিয়াত বিপ্লব স্টুডেন্ট ফ্রন্ট’ সমর্থিত ‘রেভল্যুশন ফর স্টেট অব হিউম্যানিটি’ প্যানেল তো জাল ভোট, সইবিহীন ব্যালট পেপার দেওয়ার মতো ১০টি কারণ দেখিয়ে ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়েছিল। এই অভিযোগগুলো হয়তো নির্বাচনের প্রক্রিয়াকে কিছুটা চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছিল, কিন্তু সার্বিকভাবে, এত বছর পর একটা নির্বাচন আয়োজন করাই ছিল বড় সাফল্য।
ভোটারদের বাঁধ ভাঙা উচ্ছ্বাস
অভিযোগ যাই থাকুক না কেন, একটা জিনিস ছিল স্পষ্ট: শিক্ষার্থীদের উৎসাহ! নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, দুপুর ২টা পর্যন্ত প্রায় ৪০ শতাংশ ভোট পড়েছিল, এবং প্রধান নির্বাচন কমিশনার মনির উদ্দিন জানিয়েছেন যে, সামগ্রিকভাবে প্রায় ৬০ শতাংশ ভোট পড়েছে। বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রে শিক্ষার্থীদের দীর্ঘ লাইন, উৎসবমুখর পরিবেশ – এই ছবিগুলো বলে দেয় যে, ছাত্রসমাজ এই দিনটার জন্য কতটা উদগ্রীব ছিল।
অনেক শিক্ষার্থী আমাকে বলেছে, “ভাইয়া, আমরা তো এমন একটা দিন জীবনে দেখিনি। ভোট দিতে পেরে খুব আনন্দ হচ্ছে!” এই নির্বাচন শুধু কিছু প্রতিনিধি নির্বাচন নয়, এটা আসলে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে গণতন্ত্রের প্রতি আস্থা ফিরিয়ে আনার একটা বড় সুযোগ।
উপসংহার
চাকসু নির্বাচন ২০২৫ বাংলাদেশের ছাত্ররাজনীতিতে সত্যিই একটা গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। দীর্ঘ ৩৫ বছরের নীরবতা ভেঙে এই নির্বাচন প্রমাণ করেছে যে, ছাত্রসমাজ তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন এবং তারা তাদের মতামত প্রকাশ করতে চায়। এই নির্বাচন শুধু চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়েই নয়, বরং সারা দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়েও ছাত্র সংসদ নির্বাচন আয়োজনের ক্ষেত্রে নতুন প্রেরণা জোগাবে।
আমরা সবাই এখন অধীর আগ্রহে চাকসু নির্বাচন ফলাফল-এর জন্য অপেক্ষা করছি। কে জিতবে, কে হারবে – সেটা বড় কথা নয়। বড় কথা হলো, ছাত্ররাজনীতিতে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা আর গণতান্ত্রিক চর্চা আবার ফিরে এসেছে।
তোমার কী মনে হয়? এই নির্বাচন ছাত্ররাজনীতিতে কতটা পরিবর্তন আনবে? তুমি কি চাকসু নির্বাচনের কোনো প্যানেলকে সমর্থন করছিলে? নিচে মন্তব্য করে তোমার মতামত জানাতে ভুলো না যেন! আর হ্যাঁ, যদি এই পোস্টটা ভালো লাগে, তাহলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে ভুলো না! চলো, সবাই মিলে ছাত্ররাজনীতির এই নতুন দিগন্তকে স্বাগত জানাই!